iPhone 16 Pro নাকি S25 Ultra? ৬ মাস পর সেরা ফোন কোনটি? (উত্তরটা অবাক করার মতো)

২০২৫ সালের স্মার্টফোন বাজারে দুটি নাম সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে – অ্যাপলের আইফোন ১৬ প্রো এবং স্যামসাংয়ের গ্যালাক্সি এস২৫ আলট্রা। বছরের পর বছর ধরে এই দুটি ব্র্যান্ড একে অপরের প্রধান প্রতিযোগী। কিন্তু যখন একটি ফ্ল্যাগশিপ ফোন কেনার প্রশ্ন আসে, তখন আসল দ্বিধা শুরু হয়। অনেকেই জানতে চান দীর্ঘ সময় ব্যবহারের পর অভিজ্ঞতা কেমন? তাই আজ আমরা iPhone 16 Pro নাকি S25 Ultra – এই চিরন্তন প্রশ্নের উত্তর খুঁজবো। এই আর্টিকেলে আমরা শুধু স্পেসিফিকেশন নিয়ে কথা বলবো না, বরং ছয় মাস ব্যবহারের বাস্তব অভিজ্ঞতা আপনাদের সামনে তুলে ধরব, যাতে আপনি আপনার কষ্টার্জিত টাকার সঠিক বিনিয়োগ করতে পারেন।

রিভিউ সারসংক্ষেপ

পর্যবেক্ষণের নাম (Item Reviewed): iPhone 16 Pro বনাম Samsung S25 Ultra (৬ মাস ব্যবহারের তুলনা)

বিশেষজ্ঞ সারসংক্ষেপ (Expert Summary): ৬ মাস ব্যবহারের পর, ক্যামেরা, গেমিং এবং দৈনন্দিন পারফরম্যান্সে দুটি ফোনের আসল চিত্র তুলে ধরা হলো, যা আপনাকে সেরা সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।

আমাদের রেটিং (Expert Rating): 4.7/5

ডিজাইন ও ডিসপ্লে: কোনটি বেশি আকর্ষণীয়?

যেকোনো ফোনের প্রথম আকর্ষণ হলো তার ডিজাইন। ছয় মাস ব্যবহারের পর দুটি ফোনের ডিজাইন নিয়েই আমাদের অভিজ্ঞতা মিশ্র।

iPhone 16 Pro: অ্যাপল এবারও তাদের সিগনেচার ফ্ল্যাট-এজ ডিজাইন ধরে রেখেছে। তবে টাইটানিয়াম ফিনিশের কারণে ফোনটি হাতে নিলে একটি প্রিমিয়াম অনুভূতি দেয়। এটি আগের চেয়ে কিছুটা হালকা এবং এর এজগুলো আরও সামান্য কার্ভ করা হয়েছে, যা দীর্ঘ সময় ব্যবহারে আরামদায়ক। এর ৬.৩ ইঞ্চির সুপার রেটিনা এক্সডিআর (Super Retina XDR) ডিসপ্লেটি অসাধারণ। আউটডোর ব্রাইটনেস প্রায় ২০০০ নিটস পর্যন্ত যা সরাসরি সূর্যের আলোতেও কন্টেন্ট দেখতে কোনো সমস্যা করে না।

Side-by-side comparison of iPhone 16 Pro and Samsung S25 Ultra design in hand.

Samsung S25 Ultra: অন্যদিকে, স্যামসাং তাদের গ্যালাক্সি এস২৫ আলট্রা-তে কিছুটা বक्सी কিন্তু এলিগেন্ট ডিজাইন রেখেছে। এর অ্যামোলেড (Dynamic LTPO AMOLED 2X) ডিসপ্লেটি ৬.৮ ইঞ্চি, যা ভিডিও দেখা বা মাল্টিটাস্কিংয়ের জন্য চমৎকার। এর প্রধান আকর্ষণ হলো বিল্ট-ইন এস-পেন (S-Pen), যা নোট নেওয়া বা ছবি আঁকার ক্ষেত্রে অতুলনীয়। তবে বড় আকারের কারণে এক হাতে চালানো কিছুটা কঠিন হতে পারে।

পপুলার:  অবিশ্বাস্য দামে সারাদিন ব্যবহার! সেরা ব্যাটারির এই ৪টি ফোন আপনাকে অবাক করবেই।

ছয় মাস ব্যবহারে দেখা গেছে, দুটি ফোনেই ছোটখাটো স্ক্র্যাচ পড়েছে, তাই একটি ভালো মানের কেস ব্যবহার করা আবশ্যক। ডিজাইনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পছন্দই শেষ কথা, তবে কমপ্যাক্ট এবং হালকা ফোন চাইলে আইফোন এগিয়ে থাকবে।

পারফরম্যান্স এবং গেমিং: গতির লড়াইয়ে কে জিতলো?

ফ্ল্যাগশিপ ফোনের মূল শক্তি তার পারফরম্যান্স। আমরা দুটি ফোনেই বিভিন্ন হাই-গ্রাফিক্স গেম এবং দৈনন্দিন কাজ করে তাদের আসল ক্ষমতা পরীক্ষা করেছি।

চিপসেট এর ক্ষমতা

  • iPhone 16 Pro: অ্যাপলের নতুন A18 Pro চিপসেটটি দৈনন্দিন কাজে অবিশ্বাস্যরকম দ্রুত। অ্যাপ ওপেনিং, ব্রাউজিং, এবং একাধিক অ্যাপের মধ্যে সুইচ করা খুবই মসৃণ। iOS 18 এর অপটিমাইজেশন এটিকে আরও স্থিতিশীল করেছে।
  • Samsung S25 Ultra: এতে রয়েছে কোয়ালকমের স্ন্যাপড্রাগন ৮ জেন ৪ (Snapdragon 8 Gen 4) চিপসেট। Geekbench এবং AnTuTu বেঞ্চমার্ক স্কোর অনুযায়ী, এর মাল্টি-কোর পারফরম্যান্স A18 Pro-এর চেয়ে কিছুটা এগিয়ে। অ্যান্ড্রয়েড ১৫ এবং One UI 7 এর কাস্টমাইজেশন অপশনগুলো অনেক ব্যবহারকারীর কাছে আকর্ষণীয় মনে হতে পারে।

Gaming performance of iPhone 16 Pro vs S25 Ultra with game UI visible.

গেমিং অভিজ্ঞতা

গেমিংয়ের ক্ষেত্রে দুটি ফোনই হতাশ করেনি। আইফোন ১৬ নাকি স্যামসাং এস২৫—এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য আমরা দীর্ঘ সময় ধরে PUBG, Genshin Impact এবং Asphalt 9 খেলেছি।

আইফোনে গেমগুলো দারুণভাবে অপটিমাইজ করা, কোনো প্রকার ল্যাগ বা ফ্রেম ড্রপ ছাড়াই সর্বোচ্চ সেটিংসে খেলা যায়। তবে একটানা ৩০-৪০ মিনিট খেলার পর ফোনটি কিছুটা গরম হতে শুরু করে।

অন্যদিকে, S25 Ultra-এর উন্নত ভ্যাপর চেম্বার কুলিং সিস্টেম এটিকে দীর্ঘ গেমিং সেশনের জন্য অসাধারণ করে তুলেছে। এর বড় ডিসপ্লে এবং ১২০ হার্টজ রিফ্রেশ রেট গেমিং অভিজ্ঞতাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়। যারা হার্ডকোর গেমার, তাদের জন্য S25 Ultra সামান্য এগিয়ে থাকবে। আরও বিস্তারিত জানতে GSMArena-এর মতো টেক সাইট দেখতে পারেন।

ক্যামেরা ফাইট: ছবির রাজা কে?

এখনকার সময়ে ফোনের ক্যামেরা একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফিচার। iPhone 16 Pro নাকি S25 Ultra—কার ক্যামেরা সেরা, তা বোঝার জন্য আমরা বিভিন্ন পরিবেশে ছবি এবং ভিডিও ধারণ করেছি।

iPhone 16 Pro: অ্যাপল সবসময় ন্যাচারাল এবং বাস্তবসম্মত ছবির জন্য পরিচিত। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

  • প্রধান ক্যামেরা: এর ৪৮ মেগাপিক্সেলের প্রধান সেন্সরটি দিনের আলোতে দুর্দান্ত ডিটেইল এবং সঠিক কালার টোন ধরে রাখে।
  • পোট্রেট মোড: এজ ডিটেকশন এবং ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার এখন আরও উন্নত।
  • ভিডিওগ্রাফি: ভিডিওর ক্ষেত্রে আইফোন এখনও রাজা। এর সিনেম্যাটিক মোড এবং প্রো-রেস (ProRes) ভিডিও কোয়ালিটি কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য আশীর্বাদ। আরও তথ্যের জন্য Apple-এর অফিসিয়াল পেজ দেখা যেতে পারে।
পপুলার:  গুগল পিক্সেল ১০ প্রো রিভিউ: ২০২৫ সালের সবচেয়ে ট্রেন্ডিং স্মার্টফোনের গোপন রহস্য!

A split photo comparing a portrait shot from iPhone 16 Pro and Samsung S25 Ultra.

Samsung S25 Ultra: স্যামসাং বরাবরই তার ক্যামেরার ভার্সেটিলিটির জন্য পরিচিত।

  • জুম ক্ষমতা: S25 Ultra-এর আসল শক্তি হলো এর জুম। এর ২০০ মেগাপিক্সেলের প্রধান সেন্সর এবং পেরিস্কোপ টেলিফটো লেন্স ১০০এক্স পর্যন্ত জুম করতে পারে, যা সত্যিই অবিশ্বাস্য। দূরের কোনো বস্তুর ছবি তোলার ক্ষেত্রে এর কোনো প্রতিযোগী নেই।
  • ভাইব্রেন্ট ছবি: স্যামসাংয়ের ছবিগুলো কিছুটা বেশি স্যাচুরেটেড এবং ভাইব্রেন্ট হয়, যা সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করার জন্য আকর্ষণীয়।
  • নাইট মোড: কম আলোতে ছবি তোলার ক্ষেত্রে S25 Ultra অসাধারণ পারফর্ম করে এবং ছবিকে উজ্জ্বল করে তোলে।

যারা “পয়েন্ট-অ্যান্ড-শুট” করে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়ার জন্য ভাইব্রেন্ট ছবি চান, তাদের জন্য স্যামসাং ভালো। আর যারা ন্যাচারাল টোন এবং সেরা মানের ভিডিও চান, তাদের জন্য আইফোন সেরা। এই বিষয়ে আরও জানতে আমাদের [অন্য একটি প্রাসঙ্গিক পোস্টের লিঙ্ক] দেখতে পারেন।

ব্যাটারি এবং চার্জিং: সারাদিন চলবে তো?

একটি ফোনের সবকিছু ভালো হলেও যদি ব্যাটারি ব্যাকআপ দুর্বল হয়, তবে পুরো অভিজ্ঞতাই নষ্ট হয়ে যায়। ছয় মাস ব্যবহারের পর দুটি ফোনের ব্যাটারি নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা নিচে দেওয়া হলো।

  • iPhone 16 Pro: সাধারণ ব্যবহারে (সোশ্যাল মিডিয়া, কল, মেসেজিং, ইউটিউব) আইফোন ১৬ প্রো সহজেই একদিন চলে যায়। এর ব্যাটারি অপটিমাইজেশন খুবই ভালো। তবে এতে এখনো তুলনামূলক স্লো ২৫ ওয়াট চার্জিং সাপোর্ট রয়েছে, যা ফোনটিকে সম্পূর্ণ চার্জ করতে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় নেয়।
  • Samsung S25 Ultra: এর ৫০০০ mAh ব্যাটারিটি yoğun ব্যবহারে প্রায় আইফোনের মতোই ব্যাকআপ দেয়। তবে এর প্রধান সুবিধা হলো ৪৫ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং, যা মাত্র এক ঘণ্টায় ফোনটিকে ০ থেকে ১০০% চার্জ করে দেয়। এটি ব্যস্ত জীবনে একটি বড় সুবিধা।
পপুলার:  Apple iPhone 17 Pro Max Price in Bangladesh ২০২৫: ফিচার্স, সুবিধা-অসুবিধা ও রিভিউ

যারা দ্রুত চার্জিং চান, তাদের জন্য স্যামসাং স্পষ্টতই বিজয়ী।

An infographic showing battery and charging speed comparison for iPhone 16 Pro and S25 Ultra.

৬ মাস ব্যবহারের আসল অভিজ্ঞতা: কিছু গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ

স্পেসিফিকেশনের বাইরেও দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে কিছু বিষয় সামনে আসে, যা কেনার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে।

  • সফটওয়্যার এবং ইকোসিস্টেম: আপনি যদি অ্যাপলের ইকোসিস্টেমে (যেমন ম্যাকবুক, অ্যাপল ওয়াচ) অভ্যস্ত হন, তবে আইফোন ব্যবহার করা আপনার জন্য অনেক সহজ হবে। অন্যদিকে, অ্যান্ড্রয়েডের ওপেন-সোর্স প্রকৃতি এবং কাস্টমাইজেশন অপশন অনেককে আকর্ষণ করে। [অ্যান্ড্রয়েডের কাস্টমাইজেশন নিয়ে আমাদের পোস্ট]([অন্য একটি প্রাসঙ্গিক পোস্টের লিঙ্ক]) দেখতে পারেন।
  • এস-পেন (S-Pen): স্যামসাং এস২৫ আলট্রার এস-পেনটি শুধু একটি স্টাইলাস নয়, এটি একটি প্রোডাক্টিভিটি টুল। নোট নেওয়া, ডকুমেন্ট সাইন করা বা রিমোট শাটার হিসেবে ব্যবহার করার সুবিধা এটিকে অনন্য করে তুলেছে। ছয় মাসে আমরা এর প্রয়োজনীয়তা বেশ অনুভব করেছি।
  • রিসেল ভ্যালু: বাংলাদেশে আইফোনের রিসেল ভ্যালু বা পুনঃবিক্রয় মূল্য স্যামসাংয়ের তুলনায় অনেক বেশি। আপনি যদি দুই-এক বছর পর ফোন পরিবর্তন করার পরিকল্পনা করেন, তবে আইফোন কেনা আর্থিকভাবে বেশি লাভজনক হতে পারে।

iPhone 16 Pro ও S25 Ultra নিয়ে সাধারণ প্রশ্নাবলী

প্রশ্ন: সাধারণ ব্যবহারের জন্য iPhone 16 Pro এবং S25 Ultra-এর মধ্যে কোনটি বেশি সুবিধাজনক?

উত্তর: দৈনন্দিন ব্যবহার যেমন ব্রাউজিং, সোশ্যাল মিডিয়া এবং যোগাযোগের জন্য দুটি ফোনই দুর্দান্ত। তবে, iPhone-এর সিম্পল ইউজার ইন্টারফেস অনেকের কাছে বেশি সহজ মনে হতে পারে।

প্রশ্ন: গেমিংয়ের জন্য কোনটি সেরা, iPhone 16 Pro নাকি S25 Ultra?

উত্তর: দুটি ফোনেই হাই-এন্ড গেমিং চিপসেট রয়েছে। তবে S25 Ultra-এর বড় এবং উজ্জ্বল ডিসপ্লে ও উন্নত কুলিং সিস্টেম দীর্ঘ সময় গেমিংয়ের জন্য কিছুটা বাড়তি সুবিধা দিতে পারে।

প্রশ্ন: ক্যামেরা এবং ভিডিওগ্রাফির জন্য কোন ফোনটি এগিয়ে থাকবে?

উত্তর: iPhone 16 Pro তার ন্যাচারাল কালার এবং ভিডিও স্ট্যাবিলাইজেশনের জন্য পরিচিত, যা কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের প্রথম পছন্দ। অন্যদিকে, Samsung S25 Ultra তার অবিশ্বাস্য জুম ক্ষমতা এবং ভাইব্রেন্ট ছবির জন্য এগিয়ে রয়েছে।

Leave a Comment