বাংলাদেশের বাজারে নতুন ফোন আসা মানেই আমাদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা। আর সেই ফোন যদি হয় স্যামসাংয়ের, তাহলে তো কথাই নেই। সম্প্রতি স্যামসাং তাদের জনপ্রিয় A সিরিজের নতুন সংযোজন Samsung Galaxy A56 5G নিয়ে এসেছে। আকর্ষণীয় ডিজাইন, শক্তিশালী ক্যামেরা এবং দারুণ পারফরম্যান্সের প্রতিশ্রুতি দেওয়া এই ফোনটি নিয়ে অনেকেরই আগ্রহ তুঙ্গে। কিন্তু আনঅফিসিয়াল মার্কেটে ফোনটি কেনার আগে কিছু বিষয় জানা অত্যন্ত জরুরি। এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব সেই ৫টি মারাত্মক ভুল নিয়ে, যা না জানলে আপনার কষ্টের টাকা পুরোটাই জলে যেতে পারে।
রিভিউ সারসংক্ষেপ
পর্যবেক্ষণের নাম (Item Reviewed): Samsung Galaxy A56 5G
বিশেষজ্ঞ সারসংক্ষেপ (Expert Summary): স্যামসাং গ্যালাক্সি এ৫৬ ৫জি ফোনটি এর অসাধারণ 120Hz সুপার অ্যামোলেড ডিসপ্লে, শক্তিশালী ক্যামেরা সেটআপ এবং দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য চমৎকার পারফরম্যান্স দিয়ে মিড-রেঞ্জে একটি শক্ত প্রতিযোগী। তবে আনঅফিসিয়াল মার্কেটে কেনার ক্ষেত্রে ওয়ারেন্টি এবং ফোনের আসল হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়।
আমাদের রেটিং (Expert Rating): ৪.৩/৫
ভুল ১: শুধু দাম দেখেই ফোন কিনে ফেলা
আনঅফিসিয়াল মার্কেটের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো এর কম দাম। অফিসিয়াল শোরুমের চেয়ে প্রায় ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা কমে Samsung Galaxy A56 5G পাওয়া যাচ্ছে অনেক দোকানে। এই কম দাম দেখেই অনেকে আর কিছু যাচাই করার প্রয়োজন মনে করেন না। কিন্তু এখানেই লুকিয়ে আছে প্রথম এবং সবচেয়ে বড় ফাঁদ।
কেন এটি একটি মারাত্মক ভুল?
- রিফারবিশড বা ব্যবহৃত ফোন: অনেক সময় সামান্য ত্রুটিযুক্ত বা ব্যবহৃত ফোনকে নতুন বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। বাইরে থেকে দেখতে একেবারে নতুনের মতো হলেও ভেতরের যন্ত্রাংশ পুরোনো হতে পারে, যা কিছুদিনের মধ্যেই সমস্যা তৈরি করবে।
- নকল যন্ত্রাংশ: ফোনের আসল চার্জার, ইয়ারফোন বা অন্য কোনো যন্ত্রাংশ সরিয়ে নকল বা নিম্নমানের জিনিস বক্সে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এতে আপনার ফোনের ব্যাটারি এবং পারফরম্যান্স মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
আপনার করণীয়: ফোন কেনার আগে শুধুমাত্র বিক্রেতার কথার উপর বিশ্বাস করবেন না। ফোনের বক্সটি সিল করা কিনা, IMEI নম্বরের সাথে বক্সের নম্বরের মিল আছে কিনা এবং ফোনের বিল্ড কোয়ালিটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন। একটি বিশ্বস্ত এবং পরিচিত দোকান থেকে কেনা বুদ্ধিমানের কাজ, যেমনটা অনেকেই [অন্য একটি প্রাসঙ্গিক পোস্টের লিঙ্ক]-এ আলোচনা করেছেন।
ভুল ২: ওয়ারেন্টি এবং আফটার-সেলস সার্ভিস উপেক্ষা করা
“ভাই, আনঅফিসিয়াল ফোনে কোনো ওয়ারেন্টি হয় না” – এই কথাটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু আমরা এর পেছনের ঝুঁকিটা পুরোপুরি উপলব্ধি করি না। একটি স্মার্টফোন হলো একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস, যা যেকোনো সময় সমস্যাग्रस्त হতে পারে।
কেন এটি একটি মারাত্মক ভুল?
- অফিসিয়াল সার্ভিস সেন্টারের অস্বীকৃতি: আপনার স্যামসাং এ৫৬ আনঅফিসিয়াল ফোনটিতে যদি কোনো ম্যানুফ্যাকচারিং ফল্ট বা সফটওয়্যার সমস্যা দেখা দেয়, স্যামসাংয়ের কোনো অফিসিয়াল সার্ভিস সেন্টার আপনাকে সেবা দেবে না।
- বড় খরচের ধাক্কা: ডিসপ্লে বা মাদারবোর্ডের মতো বড় কোনো সমস্যা হলে আপনাকে স্থানীয় মেকারের কাছে যেতে হবে। এতে একদিকে যেমন অনেক টাকা খরচ হবে, তেমনি ফোনের আসল যন্ত্রাংশ পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা থাকবে না।
আপনার করণীয়: কেনার আগে বিক্রেতার কাছে ওয়ারেন্টি পলিসি সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে জেনে নিন। কিছু দোকান ৭ থেকে ১৫ দিনের পার্টস বা সার্ভিস ওয়ারেন্টি দেয়। যদিও এটি অফিসিয়াল ওয়ারেন্টির মতো নয়, তবুও কিছুটা সুরক্ষা তো দেবে। ফোনের সুরক্ষার জন্য [GSMArena]-এর মতো সাইটে এর বিল্ড কোয়ালিটি এবং IP রেটিং (IP67) সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন।
ভুল ৩: ফোনের স্পেসিফিকেশন এবং আসল পারফরম্যান্স যাচাই না করা
Samsung Galaxy A56 5G ফোনটিতে ব্যবহার করা হয়েছে স্যামসাংয়ের নিজস্ব নতুন Exynos 1580 (4 nm) চিপসেট। কাগজে-কলমে এটি একটি দারুণ শক্তিশালী প্রসেসর। এর সাথে আছে একটি চমৎকার ৬.৭ ইঞ্চির সুপার অ্যামোলেড 120Hz ডিসপ্লে এবং 50MP OIS যুক্ত মূল ক্যামেরা।
কেন এটি একটি মারাত্মক ভুল?
- গ্লোবাল বনাম চাইনিজ ভ্যারিয়েন্ট: অনেক সময় বিক্রেতারা চাইনিজ বা অন্য কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের জন্য তৈরি ভ্যারিয়েন্ট বিক্রি করে। এই ফোনগুলোতে কিছু নেটওয়ার্ক ব্যান্ড বা সফটওয়্যার ফিচার বাংলাদেশের জন্য অপ্টিমাইজ করা থাকে না।
- পারফরম্যান্সের অতিরঞ্জন: বিক্রেতারা গেমিং বা মাল্টিটাস্কিং নিয়ে অনেক বাড়িয়ে বলে থাকেন। যদিও Exynos 1580 প্রসেসরটি দৈনন্দিন কাজের জন্য এবং সাধারণ গেমিংয়ের জন্য যথেষ্ট ভালো, তবে এটি হয়তো প্রতিযোগীদের মতো হাই-গ্রাফিক্স গেমে সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স নাও দিতে পারে। AnTuTu বেঞ্চমার্ক স্কোরগুলো একটি ধারণা দিতে পারে, তবে বাস্তব ব্যবহার ভিন্ন হতে পারে।
আপনার করণীয়: ফোনটি কেনার আগে কিছু রিভিউ ভিডিও দেখুন, বিশেষ করে গেমিং এবং ক্যামেরা পারফরম্যান্স নিয়ে। সম্ভব হলে দোকানেই কিছু অ্যাপ চালিয়ে বা গেম খেলে এর পারফরম্যান্স পরখ করে নিন। ফোনের ডিসপ্লে এবং ক্যামেরার কোয়ালিটি সরাসরি দেখে সিদ্ধান্ত নিন।
ভুল ৪: সফটওয়্যার এবং সিকিউরিটি আপডেট সম্পর্কে উদাসীন থাকা
একটি স্মার্টফোনের পারফরম্যান্স এবং নিরাপত্তা অনেকাংশে নির্ভর করে এর সফটওয়্যার আপডেটের উপর। স্যামসাং তাদের ফোনগুলোতে বেশ কয়েক বছরের অ্যান্ড্রয়েড ওএস এবং সিকিউরিটি আপডেট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।
কেন এটি একটি মারাত্মক ভুল?
- আপডেট না পাওয়া: কিছু আনঅফিসিয়াল ভ্যারিয়েন্টে সময়মতো বা আদৌ কোনো সফটওয়্যার আপডেট আসে না। এর ফলে আপনি নতুন ফিচার থেকে বঞ্চিত হবেন এবং আপনার ফোনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়বে।
- ম্যালওয়্যার বা ব্লটওয়্যার: কিছু অসাধু বিক্রেতা ফোনে কাস্টম রম (Custom ROM) ইনস্টল করে বিক্রি করে, যাতে আগে থেকেই ম্যালওয়্যার বা অপ্রয়োজনীয় অ্যাপস (Bloatware) থাকতে পারে। এটি আপনার ব্যক্তিগত তথ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
আপনার করণীয়: ফোনের ‘Settings’ থেকে ‘About Phone’ এবং ‘Software Update’ অপশন চেক করুন। দেখুন ফোনটি লেটেস্ট অফিসিয়াল সফটওয়্যারে চলছে কিনা। স্যামসাংয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (Samsung’s Official Website) গিয়ে মডেলটির সফটওয়্যার সাপোর্ট সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন।
ভুল ৫: ফোনের বক্স এবং IMEI নম্বর সঠিকভাবে না মেলানো
এটি সবচেয়ে সাধারণ কিন্তু ভয়ংকর একটি ভুল। ফোনের বৈধতা এবং এটি নতুন কিনা তা যাচাই করার প্রধান উপায় হলো এর IMEI (International Mobile Equipment Identity) নম্বর।
কেন এটি একটি মারাত্মক ভুল?
- চোরাই ফোন: বক্সের IMEI নম্বরের সাথে ফোনের IMEI নম্বরের মিল না থাকলে ফোনটি চোরাই হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। এমন ফোন ব্যবহার করা আইনত দণ্ডনীয় এবং যেকোনো সময় আপনার সিম কার্ড ব্লক হয়ে যেতে পারে।
- নকল ফোন: অনেক সময় আসল বক্সের ভেতরে একটি নকল বা ক্লোন ফোন ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। IMEI নম্বরই পারে এই ধরনের প্রতারণা থেকে আপনাকে বাঁচাতে।
আপনার করণীয়:
- ফোনের ডায়াল প্যাডে *#06# ডায়াল করে IMEI নম্বর বের করুন।
- এই নম্বরের সাথে ফোনের বক্সের গায়ে থাকা স্টিকারের IMEI নম্বরের মিল আছে কিনা তা ভালোভাবে দেখুন।
- ফোনের বিল বা রশিদেও বিক্রেতাকে IMEI নম্বরটি লিখে দিতে বলুন।
এই ছোট একটি পদক্ষেপ আপনাকে ভবিষ্যতের বড় বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে। আনঅফিসিয়াল ফোন কেনার ঝুঁকি এবং করণীয় সম্পর্কে আরও জানতে আমাদের [অন্য একটি প্রাসঙ্গিক পোস্টের লিঙ্ক] পড়তে পারেন।
Samsung Galaxy A56 5G নিয়ে সাধারণ প্রশ্নাবলী
প্রশ্ন: বাংলাদেশে Samsung A56 5G-এর আনঅফিসিয়াল দাম কত হতে পারে?
উত্তর: বাংলাদেশে Samsung Galaxy A56 5G-এর আনঅফিসিয়াল দাম ভ্যারিয়েন্ট এবং বিক্রেতার উপর নির্ভর করে সাধারণত ৪২,০০০ থেকে ৫২,০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে। তবে মনে রাখবেন, এই দাম পরিবর্তনশীল।
প্রশ্ন: Samsung Galaxy A56 5G কি গেমিংয়ের জন্য ভালো?
উত্তর: হ্যাঁ, এর Exynos 1580 প্রসেসর এবং 120Hz রিফ্রেশ রেটের সুপার অ্যামোলেড ডিসপ্লের কারণে এটি বেশ ভালো গেমিং অভিজ্ঞতা দেয়। PUBG, Call of Duty-এর মতো জনপ্রিয় গেমগুলো মিডিয়াম থেকে হাই সেটিংসে মসৃণভাবে খেলা যায়। তবে এটি একটি chuyên গেমিং ফোন নয়।
প্রশ্ন: আনঅফিসিয়াল স্যামসাং ফোন কেনার প্রধান ঝুঁকি কী?
উত্তর: প্রধান ঝুঁকি হলো অফিসিয়াল ওয়ারেন্টি না পাওয়া। এর ফলে ফোনে কোনো সমস্যা হলে আপনাকে নিজ খরচে স্থানীয় দোকান থেকে মেরামত করতে হবে, যেখানে যন্ত্রাংশের গুণমান এবং নির্ভরযোগ্যতার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এছাড়া নকল বা ব্যবহৃত ফোন পাওয়ার ঝুঁকিও থাকে।